সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের একাধিক ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তদানীন্তন সময়ে ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। জানা যায়, উপহারের ঘর বরাদ্দ পাওয়া সুবিধাভোগী পরিবাররা ৪৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন অন্যের কাছে।
জানা গেছে, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫০টি উপহারের ঘর নির্মাণ করা হয়। জনপ্রতি দুই শতক জমিসহ একটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এই ৫০টি ঘর থেকে ১০টি ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া ব্যক্তিরা। ঘর ক্রয় করা ব্যক্তিরা এখন ওই ঘরে বসবাস করছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ- প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ফলে প্রকৃত ভূমিহীনরা সরকারের এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পায়নি। কয়েক বিঘা জমি ও পাকা বসতবাড়ি রয়েছে এমন ব্যক্তিও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এ ঘর পেয়েছেন। এখন তারাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘর বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২ নম্বর ঘর বরাদ্দ হয়েছে মোছা. রমিছা বেগমের নামে। অথচ ঘরটিতে এখন বসবাস করছেন আফাজ উদ্দিনের পরিবারবর্গ। আব্বাস উদ্দিনের স্ত্রী আকতারা বেগম জানান, রেভিনিউ স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৯৫ হাজার টাকায় রমিছা বেগমের নিকট থেকে ঘরটি তিনি কিনে নিয়েছেন।
সিদ্দিকুর রহমান ও মমেনা খাতুন দম্পতির নামে ২৬ নং ঘরটি বরাদ্দ। রেভিনিউ স্ট্যাম্পে এ ঘর ৫০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন সোকজান বেগম।
২৫ নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সুফিয়া খাতুন ও নুর ইসলাম দম্পতি। তাদের কাছে থেকে ৫৫ হাজার টাকায় ঘরটি কিনে বসবাস করছেন শাহ আলম ও তার পরিবার।
৫০ নং ঘর বরাদ্দ সুরুজ্জামান আলী ও তার স্ত্রী হালিমা খাতুনের নামে। তাদের নিকট থেকে এ ঘরটি ৫৭ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন মহোছেনা বেগম ও মমিনুর রহমান দম্পতি।
৪৪ নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন লিটন ইসলাম। তার নিকট থেকে ৫৫ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন জাবিতন বেগম ও তার পরিবার।
একইভাবে প্রধানমন্ত্রী দেওয়া উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১২, ৩০, ৩৩, ৩৭ এবং ৩৯ নং ঘরগুলো টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন উপকারভোগী ব্যক্তিরা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যান্য বাসিন্দারা জানান- এসব ঘর যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তারা কেউ এখানে বসবাস করেন না। যারা টাকা দিয়ে কিনেছেন তারাই এখন এখানে বসবাস করছেন।
এই সব ঘরে বসবাসকারী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে ঘর কিনে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তাদের কোনো বাড়িঘর ও জমিজমা নেই। আবেদন করেও তারা সরকারের ঘর বরাদ্দ পাননি। তাই নিরুপায় হয়ে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের নিকট থেকে ঘর কিনে বসবাস করছেন।
২৬ নং ঘর কিনে বসবাস করা সোকজান বেগম বলেন- তার বাড়িঘর নেই, জমি-জমাও নেই। ভিক্ষাবৃত্তি করে খেয়ে না খেয়ে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে সিদ্দিকুরের নিকট থেকে ঘরটি কিনেছেন। সিদ্দিক তার নামে চুক্তিপত্র করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
৫০ নং ঘর কিনেছেন মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, একটি ঘরের জন্য আবেদন করেও পাইনি আমি। থাকার জায়গা নেই, তাই বাধ্য হয়ে কিনেছি। কারণ পরিবার নিয়ে থাকার মতো কোনো জায়গা নেই আমার।
মমিনুর বলেন, প্রথমে ঘর বাবদ ৫৭ হাজার টাকা ও পরে টিউবয়েল বাবদ আরো ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন ঘরের মালিক সুরুজ্জামানকে। এ ছাড়াও টাকা দিয়ে ঘর কেনার কথা স্বীকার করেন, শাহ আলম, আকতারা বেগম, জাবিতন ও ইয়াসমিন।
ঘর বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, সে সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্যরা তালিকা করেছিল। তাদের দেওয়া তালিকায় আমি শুধু প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছি। তারাই যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেজবাহুর রহমান বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি বরাদ্দ ও তালিকা প্রণয়ন করেছেন উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি। আমরা শুধু তালিকা অনুয়ায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। ঘর বিক্রির বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ঘর বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।