দেশের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় এসেছে আ.লীগ, নিজের নয়

জাতীয় রাজনীতি

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

নিজের নয়, দেশের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। এ কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যেখানে বলেছিল ছাত্রদলই নাকি আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি সেখানে ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা আর কলম। বলেছিলাম পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। আর অশিক্ষিত ও মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে সেই দেশের কখনো অগ্রযাত্রা হতে পারে না।

এ সময় ছাত্রলীগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এগিয়ে আসে। ওয়ান-ইলেভেন, কোভিড-১৯-এ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যা, খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ছাত্রলীগ মানুষের ধান কেটে দেয়। তাই ছাত্রলীগের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস, অনেক আস্থা। তারুণ্যের শক্তি এক দিন এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি শহীদের খাতায় চোখ বোলাই তাহলে দেখব ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিটি অর্জন আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস- এই কথা বলে গিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আমরা যে বিদেশে ছিলাম দেশে আসতে পারিনি, তখন আমাদের ফিরে আসার দাবিটা প্রথমে ছাত্রলীগ করে। এভাবে বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।

প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজে আদেশ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ তুলেন।

ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দিয়েছিল, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য সেটাও সরকারি বেতনধারী। সরকারি আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবে। এর বেশি হলে থাকতে পারবে না। তারপরও বেআইনিভাবে ১০ বছর চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে বারবার আমাদের ওপর চাপ।’

‘একটি বড় দেশও বারবার চাপ দিত’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। সে মামলায় হেরে যায়। তারপর তার বিদেশি বন্ধু দ্বারা…এটা কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বোর্ডে হয়নি। হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব, কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা কিন্তু সেই জাতি। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারে নাই।’

এর আগে সমাবেশে যোগ দিতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্রনেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। ফলে উদ্যানের চারপাশ মিছিলে মুখরিত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রবেশমুখেও ভিড় বাড়ে।

সমাবেশে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকেই অবস্থান করেন নেতাকর্মীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতে দেখা যায়। দুপুর ১টার পর থেকে রাজধানীর বাইরে থেকে আসা সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মীদের ভিড় বাড়ে সমাবেশের প্রবেশমুখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গেট, বাংলা একাডেমির সামনের অংশ, কালীমন্দির গেট ও রমনার আইইবির সামনের গেটে ভিড় করেন নেতাকর্মীরা। এতে সমাবেশস্থলের প্রবেশমুখেই দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়।

এদিকে ছাত্রসমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছে র‌্যাব। যানবাহন চলাচলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *