সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
অভয়নগরে সড়কের পাশে ১৪ বছর ধরে তালের বীজ রোপণ করে চলেছেন চিত্তরঞ্জন দাস। তার এই মহতী উদ্যোগের কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম আবু নওশাদ পরিদর্শন করেছেন গাছ লাগানো বিভিন্ন এলাকা।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলার ধোপাদী ধোপাপাড়া টু গোবিন্দপুরের সড়কে চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে থেকে নিজ হাতে তালের বীজ রোপণ করেন ইউএনও নিজেও।
এরপর তিনি চিত্তরঞ্জন দাসের হাতে লাগানো তালের গাছ দেখতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করেন। এ সময় ইউএনও বলেন, এই তালগাছ আমাদের অনেক উপকার করে। তালগাছ আমাদের ছায়া দেয়। বজ্রপাত ঠেকাতে অনেক সহযোগিতা করে। আমি চিত্তরঞ্জন দাসের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এক কথায় বলা যায় তালগাছ অনেক কাজে লাগে।
পরিদর্শনকালে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেম্বার ইকবাল হোসেন, সমাজসেবক হরে কৃষ্ণ, আইয়ুব খানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, ৫৫ হাজার তালের চারা রোপণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলার ধোপাদী গ্রামের এক হতদরিদ্র কৃষক। দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে তালগাছ লাগানো নিয়ে সম্প্রতি বেশ আলোচনা হলেও ১৪ বছর আগে নীরবে-নিভৃতে এ কাজ শুরু করেছিলেন যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের মৃত শিশুবর দাসের ছেলে তালগাছপ্রেমী চিত্তরঞ্জন দাস। অন্যদের ফেলা দেওয়া তালের বীজ সংগ্রহ করে নিজ খরচে এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার তালের চারা লাগিয়েছেন তিনি। বিভিন্নভাবে এই বীজ নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হয়েছে চারাও। এমনকি গাছও নষ্ট হয়েছে কিন্তু হাল ছাড়েননি চিত্তরঞ্জন দাস। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালগাছ রোপণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করেই তিনি পরম শান্তি পান বলে জানান।
১৪ বছর আগে তার রোপণকৃত তালের গাছ এখন অভয়নগরের বিভিন্ন সড়কের দুধারে দৃশ্যমান। বজ্র নিরোধক পরিবেশবান্ধব এ গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। ধোপাদী গ্রামের সড়কগুলোতে গেলে সারি সারি তালগাছ নজর কাড়বে যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর। ধোপাদী, বুইকারা, সরখোলার পথজুড়ে আছে চিত্তরঞ্জনের লাগানো হাজার হাজার তালগাছ।
চিত্তরঞ্জন দাস জানান, এখন অসংখ্য তালগাছ আছে যেগুলো বড় হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক গাছই বড় হতে পারেনি। গাছ একটু বড় হলেই অনেকে ডাল-পাতা ছেঁটে নিয়ে যায়। তালপাখা বানানোর জন্য এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পাতা কেটে নিয়ে যায়। আমি একদিন থাকব না, কিন্তু এই তালের চারা আমার স্মৃতি বহন করবে শত শত বছর। মূলত তালগাছের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই এ গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা করে আসছি। একটি তালগাছ পরিপক্ব হতে মূলত ১৩ থেকে ১৪ বছর সময় নেয়। এখন থেকে ধাপে ধাপে হয়তো অনেক গাছেই ফল আসবে। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিবে, বজ্রপাত ঠেকাবে। এ বছর ২০ হাজার তালের বীজ কিনেছি। ধাপে ধাপে বীজগুলো লাগানো হবে।
ধোপাদী গ্রামের আয়ুব খান জানান, আমরা বিলে ধান চাষাবাদ করি, ঘাস কেটে বাড়ির ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চিত্তরঞ্জনের লাগানো তালগাছের নিচে বসে বিশ্রাম করি।
হরে কৃষ্ণ নামের এক ব্যক্তি জানান, সড়কের পাশ ধরে সারি সারি তালগাছ দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগে। এসময় দরিদ্র কৃষক চিত্তরঞ্জনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অনেকে। পরিবেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জনের কৃত্তি এলাকাবাসীর নজর কাড়লেও সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এখনো পাননি ন্যূনতম কোনো স্বীকৃতি। তালের চারা সংরক্ষণ ও পরিচর্যায় সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ভালো কাজের স্বীকৃতি চান এলাকাবাসী।
সিরাজ শেখ নামের অপর ব্যক্তি জানান, চিত্তরঞ্জন দাস নিজ উদ্যোগে অভয়নগরের বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য তালের চারা রোপণ করেছেন, যা এখন দৃশ্যমান। ভবিষ্যতে এ তালগাছগুলো দেশের সম্পদ হয়ে থাকবে।