স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
একটি দামি মোবাইল ফোন কিনতে বাবার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ নাটক সাজিয়েও পার পেল না মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোর ও তার সহযোগীরা। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় পুলিশ সত্যটা বের করেছে। কথিত অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে উদ্ধার এবং এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে।
পুলিশ জানায় , গাইবান্ধার বাসিন্দা মো. আলতাফুর রহমান বগুড়ার গাবতলী থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ করেন, তার ছেলে গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নে একটি মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তার ছেলে মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই শিক্ষার্থী তাদের বলেছে , তার বাবা ঢাকা থেকে বগুড়া শহরে তার জন্য কয়েকটি বই পাঠিয়েছেন এবং তাকে বইগুলো আনতে বলেছে। এরপর বইগুলো আনতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু পরে আর মাদ্রাসায় ফিরে না আসলে তাকে বহু স্থানে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ওই শিক্ষার্থীর বাবার মোবাইল নাম্বারে ফোন দেয়। ওই ফোন নম্বর থেকে তার ছেলে নিজেই তাকে জানায়, তাকে অপহরণ করে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি ফোনটি কেড়ে নিয়ে তাকে বলে, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে, তাকে ফিরে পেতে হলে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে, অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে। একথা বলেই ফোনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. স্নিগ্ধ আখতারের তত্বাবধানে বগুড়ার ডিবি পুলিশ ও গাবতলী থানা পুলিশ যৌথ টিম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টার দিকে শহরের পুরাণ বগুড়া তিনমাথা রেলগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কথিত অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে উদ্ধার এবং এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে। তবে এসময় অপর একজন পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. খায়রুল ইসলাম লিমন (২০) ও মো. মেহেদী হাসান (২২)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও তার চাচাতো ভাই খায়রুল ইসলাম লিমন জানায়, ওই শিক্ষার্থীর দামি মোবাইল কেনার প্রয়োজন ছিল। এজন্য সে নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়ে তার বাবার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করতে চেয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে একত্রিত হয়ে এই অপহরণ নাটকের পরিকল্পনা করে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. স্নিগ্ধ আখতার জানান,একটা মোবাইল ফোনের জন্য ওই শিক্ষার্থী এই অপহরণ নাটক করেছিল। ছেলেটি স্বেচ্ছায় নিখোঁজ ছিলো। বিষয়টি পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তবে ওই ছেলের বাবা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের না করায় আটকদের মুচলো নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।