সেনারা ফায়দা লুটছে , মাশুল গুনছে জনগণ

আন্তর্জাতিক

অনলাইন ডেস্ক

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। সুদানের জনগণেরও একই অবস্থা। দেশটিতে টানা তিন দিন ধরে চলা সামরিক সংঘর্ষের উত্তাপে পুড়ছে নিরপরাধ সাধারণ মানুষ। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে প্রায় ৩০০’শর বেশি মানুষ। ফুরিয়ে যাচ্ছে খাবার ও পানি। এ ছাড়াও হামলার জেরে দেশজুড়ে ভয় ও শঙ্কার পরিবেশের সৃষ্টি করেছে শক্তিধর সেনাবাহিনী ও আরএসএফ। নিজেদের ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করার ফায়দা লুটছে সেনারা। আর তার মাশুল গুনছে নিরীহ জনগণ। বিবিসি।

রাজধানী খার্তুমের একজন মানবাধিকার কর্মী দুয়া তারিক সোমবার বিবিসিকে বলেন, এখানে তিন দিনের প্রচণ্ড সংঘর্ষে মানুষের খাবার ও পানি ফুরিয়ে আসছে। প্রায় দুদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন ছিল অনেকেই। দোকানপাট বন্ধ রাখতেও বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি সংঘর্ষের সময় স্থানীয় অনেক বাসিন্দাকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পুনরুদ্ধার করারও সময় ছিল না।

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতিটি তার পরিবারের জন্য ভয়ংকর। কারণ তার বোন এবং যুবতী ভাগ্নি তার সঙ্গে থাকার জন্য পালিয়ে গেছে। আরেক অধিকার কর্মী ডালিয়া মোহাম্মদ আবদেল মোনিয়মে জানান, রাজধানীতে খাবার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক কারখানা কাজ করছে না। সুপারমার্কেটগুলোতে সবজি ও ফলজাতীয় খাবারগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে পারলেও জরুরি কিছুই পাই না। দেশটিতে সহিংসতা শুধু রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।

আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের একজন প্রকৌশলী ও বাসিন্দা ওসমান আবু বকর বলেন, শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শহরে জীবন স্বাভাবিক ছিল।

এরপর সহিংসতা শুরু হলে আমরা সবাই একসঙ্গে একটি কক্ষে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলাম। সংঘর্ষে হাসপাতালকেও ছাড় দিচ্ছে না দুই বাহিনী। খার্তুমের চিকিৎসকরা হাসপাতালগুলোতে আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সুদান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মিডিয়া সেক্রেটারি রাজান আল-দৌরি বার্তা সংস্থা আলজাজিরাকে বলেন, আল-শাব হাসপাতাল এবং আল-খার্তুম হাসপাতালে বোমা হামলার ফলে সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, খার্তুমের হাসপাতালগুলো সংঘাতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত। এ কারণেই তারা বোমা হামলা চালাচ্ছে। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সুদানিজ রেড ক্রিসেন্টকে হাসপাতালে বোমা হামলা বন্ধ করতে সামরিক বাহিনীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার আহ্বান জানান।

সুদানে অবস্থিত রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা ওসামা ওসমান আবুবকর বলেন, হাসপাতালগুলোতে ৩০০ জনেরও বেশি আহত মানুষ রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক। এ ছাড়াও হাসপাতালগুলো বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আলোকে জেনারেটরের ওপর নির্ভর করছে। আমরা যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছি। এদিকে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিয়ম আল-সাদিক আল-মাহদি বিবিসিকে বলেন, সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের সংঘর্ষ সুদানের জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কারের দিকেই আঙুল তোলে। সামরিক শাসন হটিয়ে এখন সময় এসেছে দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার।

সুদানের বর্তমান সহিংসতা নিয়ে আন্তজার্তিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র নেতা এবং অনেক সংস্থা সংঘর্ষ অচিরেই বন্ধ করতে বলেছেন। সাধারণ জনগণের কথা মাথায় রেখে দুপক্ষকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন অবিলম্বে সহিংসতা সমাপ্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সুদানে সামরিক সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য। দেশটির জনগণ সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে দেখতে চায়। তারা গণতন্ত্র চায়। বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের মাধ্যমে সুদানকে সেই পথে ফিরে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *