সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন
খুলনার শিববাড়ি মোড়। ফাইল ছবি
খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি মোড়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিল খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এর মধ্যে নগরীর ‘শিববাড়ি মোড়ের’ নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ এবং বর্তমান ‘বঙ্গবন্ধু চত্বরের’ নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ শেখ আবু নাসের চত্বর’ নামকরণের এজেন্ডা নিয়ে আগামীকাল রোববার কেসিসির সাধারণ সভায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচনার মুখে শনিবার বিকেলে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কেসিসি।
এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে কেসিসি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘রোববার সাধারণ সভায় নাম পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি এজেন্ডা রাখা হয়েছে। তবে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে অনেকের আপত্তির কথা জানা গেছে। ওই দুটি এলাকার নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে না, যা আছে তাই থাকবে।’
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেলা ১১টায় নগর ভবনে কেসিসির ১৯ তম সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছে। যা বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের শেষ সাধারণ সভা। এ সভার আলোচ্যসূচির ৫ নম্বরে রয়েছে ‘নগরীর শিববাড়ি মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর এবং বর্তমান বঙ্গবন্ধু চত্বরের (শেরে বাংলা রোড ও কেডিএ এভিনিউয়ের সংযোগস্থল) নাম পরিবর্তন করে শহীদ শেখ আবু নাসের চত্বর নামে নামকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ’।
কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম এই সভার নোটিশ দিয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার রাতে সভার নোটিশটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে খুলনাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই উদ্যোগের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। আবার অনেকে কেসিসির এমন উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার আহবায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ববি বলেন, নগরীর শিববাড়ি মোড়ের নামটি ইতিহাস বিড়জিত এবং ঐতিহ্যবাহী। শিববাড়ি নাম পরিবর্তন না করার দাবি জানাচ্ছি।
একই সঙ্গে নগরীর রয়েলের মোড় থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত সড়কটির নাম কেডিএ এভিনিউ থেকে পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করা যেতে পারে বলেও মতপ্রকাশ করেন তিনি।।
পূজা উদযাপন পরিষদের মহানগর সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত অনেকের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। কারণ প্রায় ৩৮৫ বছর ধরে জায়গাটির নাম শিববাড়ি মোড়। বিগত জোট সরকারের সময়ে নাম পরিবর্তন করে ‘বাবরি চত্বর’ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তখন তা পারেনি। তিনি বলেন, শনিবার সকালে সিটি মেয়রকে ফোন করে তিনি কেসিসির এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী একটি জায়গার নাম সরিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম স্থাপন করা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? তা না করে নতুন কোনো সড়ক, এলাকা বা স্থাপনার নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করলে কোনো সমালোচনা বা বিতর্ক হবে না।
নগরীর বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আমিরুল খসরু তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নতুন নামে শিববাড়ি মোড়ের কোনো ফায়দা না হলেও কারো কারো নিশ্চয়ই হবে। অসীমের সঙ্গে তুলনীয় বঙ্গবন্ধুকে আমরা কবে যথাযথ সম্মান দেখাতে শিখবো?’