সিলেটে ব্যুরো
সিলেটে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া পুত্র সেজে বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের নাঈম আজাদ টিপুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তোলেন নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিদবাজার বনকলাপাড়া নুরানী ৭৮ নম্বর বাসার স্থায়ী বাসিন্দা সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকন।
তিনি বলেন, ‘আমার পিতা মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দ তছির আহমদ। জনৈক সমছুননেহার সমছুন আমার বাবার তৃতীয় স্ত্রী দাবি করে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চাচ্ছেন। এতে পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সমছুনের সহযোগী নাঈম আজাদ টিপু এই চক্র গড়ে তুলে গভীর ষড়যন্ত্র করছে।’
লিখিত বক্তব্যে আবু শাহিন খোকন বলেন, ‘আমার পিতা আয়কর অফিসে সরকারি চাকরি করতেন। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। ১৯৯১ সালের ১৬ এপ্রিল তার মৃত্যুর সময় আমার মা শাহেনা বেগম এবং আমাদের সৎমা রুনী বেগম জীবিত ছিলেন। তাই বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা দুই পরিবার আপস-মীমংসার মধ্যে সম্পদ ভাগবণ্টন করে ভোগ করে আসছি। পেনশনের টাকা এখনো দুই পরিবার নিয়মিতভাবে পেয়ে আসছি।’
তিনি জানান, ১৯৯২ সালে আমার মা শাহেনা বেগম জনৈক কামাল মিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালে তার ঘরে নাঈম আজাদ টিপুর জন্ম হয়। ২০০৮ সালে মা, তিন ভাই এবং দুই বোন মিলে বনকলাপাড়ার বাসা সৎমা রুনী বেগমের ছেলেদের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমানে তারা বনকলাপাড়া নুরানী ১০৫/২৫ নম্বর বাসায় বসবাস করছেন। এসব কেনাবেচার দলিলে টিপুর কোনো অস্তিত্ব নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০১৭ সালে হঠাৎ নাঈম আজাদ টিপু তার পিতার নামের স্থলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দ তছির আহমদের নাম লিখতে শুরু করে। এমনকি বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলে ভোগ করছে। এ ঘটনায় বড় ভাই আমার সৎমায়ের বড় ছেলে সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ আদালতে টিপু ও মায়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা করেন। পরে বড় ভাই মারা গেলে মামলাটি আদালত নিষ্পত্তি করে দেন।’
সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকন বলেন, ‘সমছুনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আমার বাবার তৃতীয় স্ত্রী নন। এমন হলে ১৯৯১ সাল থেকে সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারার অংশীদার হতেন। হঠাৎ নিজেকে বাবার স্ত্রী দাবি করার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। টিপু সমছুনকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চাইছে।’
এমন পরিস্থিতিতে গত বছর নাঈম আজাদ টিপুর বিরুদ্ধে আদালতে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা করেন খোকন। আদালতের নির্দেশে সিআইডি গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদন দেন।
জানা গেছে, নাঈম আজাদ টিপুর প্রকৃত বাবা জনৈক কামাল মিয়া। সিআইডির প্রতিবেদন দাখিলের পর ওয়ারেন্ট হলে পুলিশ টিপুকে গ্রেফতার করে। ১ মাস ২০ দিন পর গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালত আপস শর্তে তাকে জামিন দেন।
খোকনের অভিযোগ, ‘জামিনে বের হয়েই টিপু আবারো অপকর্ম শুরু করেছে। মা শাহেনা বেগমকে বাদী করে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে এসএমপির এয়ারপোর্ট ও কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজি মামলা করেছে। একইসঙ্গে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি টিপুসহ অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সিলেটের পুলিশ কমিশনারসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।