দুই কিশোরের জীবন যুদ্ধ..

খোলা কলাম

তারিক মাহমুদ

ছবি: লেখকের ক্লিক

চারিদিকের হাওয়াটা ও গরম।ঢাকা মাওয়া রোডের কদমতলী এলাকায় আছি। আশে পাশে কোন বাড়ী ঘর নেই। দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে। নদীর পাসপোর্ট রিনিউ করতে এসেছি। ওর কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমি গাড়ীর ভিতরে বসে বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছি। আমার অপেক্ষা আর ফুরুচ্ছে না।
এদিকে ক্ষিদার যন্ত্রণা ও সইতে হচ্ছে।
তখনি দূরে দূরন্ত দুই কিশোরের দিকে চোখ পড়ে আমার।অনেক সময় নিয়ে দুজনকে খেয়াল করি।একটা অটো রিকসায় বসা।একজনের হাতে একটা বিরানীর প্যাকেট। ওরা দুপুরের রোদের মধ্যে অটো রিকশার ভিতরে থেকেই বিরানীর প্যাকেট খুলে। তারপর ভাগাভাগি করে খেতে থাকে। কি কি বিষয় নিয়ে ওরা দুজনে গল্প করে।হাসাহাসি করে। দৃশ্য টা আমার খুব মনে ধরে।
কি মনে করে আমি ওদের কাছে যাই।আমার শৈশব, কৈশোরের জীবনটার কথা মনে পড়ে। এই বয়সে আমিও সারাদিন টইটই করে বনে,মাঠে ঘুরে বেড়িয়েছি।আমাকে খোঁজার জন্য আমার বড় বোন শেফালী সারক্ষন ব্যস্ত থাকতো।
কি যে স্বপ্নের শৈশব, কৈশোর ছিল আমাদের।
আর আমার মেয়ে নদী এই রকম বয়সে ছিল ফেনী গালর্স ক্যাডেট কলেজে। কঠিন নিয়মের ভিতরে তার সেই শৈশব, কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে।
এখন অষ্টেলিয়ায় চলে যাবে আরো উচ্চতর পড়াশোনার জন্য। সেখানে তার মা ও বর্তমানে বসবাস করছে।
নদীর পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আমার এই অপেক্ষা।
কথা হলো দুই কিশোরের সাথে। ছোটটার বয়স ১২। বড়টার ১৪ বছর। খুব চটপটে। চালাক ও। একজন অটো চালায়।অন্য জন শিখে। সাহায্যকারী। দিন শেষে ৪০০/৫০০ টাকা থাকে। এই সামান্য টাকাই ওরা ওদের সংসারে দেয়। দুজনই নদী ভাঙা পরিবারের সদস্য । একজনের বাড়ী শরিয়তপুর। অন্য জনের বরগুনা। দুজনের দারুন বন্ধুত্ব। আমি কথা বললাম কিছুক্ষন।
খুব আন্তরিক ভাবে ওরা আমার সাথে সামান্য সময় কাটালো।
আমারও সময় টা খুব ভালো লাগলো।
চলে যাবার খুব তাড়া ওদের। ভাড়া মারতে হবে।
তারপর তো টাকা পাবে। সংসারে দিবে।
আমি এই দুই কিশোরের জীবন যুদ্দের কথা চিন্তা করতে থাকলাম। আর ফেলে আসা শৈশবের দিনগুলোর কথা ভাবতে লাগলাম।
হায়রে জীবন।
কত যে কঠিন এই জীবন । এই ওদের জীবন যাএা দেখেই বুঝা যায়। কেবল যে যার অবস্হান থেকেই জীবন যাপনের এই অনুভূতিটুকু উপলব্ধি করতে পারে।

১০/০৪/২০২৩
বাসাবো,ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *